নেত্রকোনার মদনে প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল দশা: শিক্ষক-৩, শিক্ষার্থী ১২

নেত্রকোনার মদন উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র অত্যন্ত করুণ। একাধিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির পাশাপাশি শিক্ষক উপস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মদন উপজেলায় মোট ৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। একই সঙ্গে শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত হচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (তারিখ উল্লেখযোগ্য হলে বসানো যাবে) ফতেপুর ইউনিয়নের বনতিয়শ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় শিফটে মাত্র তিনজন শিক্ষিকা ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন। তৃতীয় শ্রেণিতে ৬ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ২ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। সর্বমোট উপস্থিত ছিল মাত্র ১২ জন শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পিপুলা আক্তার জানান, "এখন বৈশাখ মাস, আমাদের এলাকায় এই সময়ে ধান কাটার কাজ থাকে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিশুরাও কাজে যায়। ফলে তারা স্কুলে আসতে চায় না। আমি কয়েকবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের ডাকলেও সাড়া মেলেনি।"
অন্যদিকে, দেওসহিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষকের মধ্যে দুজন ছুটিতে ছিলেন। দ্বিতীয় শিফটে ৭৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২২ জন ক্লাসে উপস্থিত ছিল। একই চিত্র দেখা যায় ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, যেখানে ১১৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৪২ জন উপস্থিত ছিল এবং তিনজন শিক্ষকের মধ্যে দুইজন উপস্থিত ছিলেন। লাছারকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও চারজনের মধ্যে দুইজন শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লাছারকান্দা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেনু মিয়া জানান, "একজন শিক্ষক ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দিতে গেছেন। অন্যজন তাঁর অসুস্থ সন্তানকে চিকিৎসা করাতে গেছেন এবং নিয়মমাফিক ছুটি নিয়েছেন।"
মদন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদা রুবায়াত বলেন, "আমি এই উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। এখানে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদে তিনজন থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে মাত্র একজন রয়েছেন। এই অবস্থায় ৯৪টি বিদ্যালয় মনিটরিং করা অত্যন্ত কঠিন। আমি ইতোমধ্যে কয়েকটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। এই এলাকার মানুষ পুরোপুরি বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল, তাই মৌসুমে শিক্ষার্থীরা পরিবারের সঙ্গে মাঠে চলে যায়। আমরা চেষ্টা করছি এই পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান করার।"
সচেতন মহলের দাবি, শিক্ষা ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মনিটরিং জোরদার করা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিত করা জরুরি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: